ভ্যাকু ৫হাজার-ট্রাক্টর ২হাজারে মাসিক কার্ড নাঙ্গলকোট জুড়ে কৃষি জমির মাটি কাটার মহোৎসব, ধুলাবালিতে সড়কে দিনেও রাতের আধাঁর

প্রকাশিত: ৪:২২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২৪

ভ্যাকু ৫হাজার-ট্রাক্টর ২হাজারে মাসিক কার্ড নাঙ্গলকোট জুড়ে কৃষি জমির মাটি কাটার মহোৎসব, ধুলাবালিতে সড়কে দিনেও রাতের আধাঁর

স্টাফ রিপোর্টার :
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৬ ইউনিয়নে নির্বিচারে কৃষিজমি ও সরকারি খালের মাটি কেটে ইটভাটা, বিভিন্ন স্থাপনা ও নতুন বাড়ি নির্মাণকারীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে কৃষি জমি ধ্বংস, সড়ক গুলো নষ্ট ও ধুলাবালির কারণে শিশু-সহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অবৈধ ট্রাক্টরের বেপরোয়া গতির কারণে ধুলাবালিতে উপজেলার প্রায় সকল সড়কে দিনের বেলায়ও রাতের অন্ধকার নেমে আসে। প্রশাসন কিছু স্থানে অভিযান করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ফলে তিন ফসলি জমিকেও পুকুর বানাচ্ছে মাটি সন্ত্রাসীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার বাঙ্গড্ডা উইনিয়নের কাদবা, সোনাবেরী, করের ভোমরা, ছোট স্বাঙ্গীশ্বর, পেরিয়া ইউনিয়নের আশারকোটা, উত্তর শাকতলী, শ্রীফলিয়া, কাজী জোড়পুকুরিয়া, চেহরিয়া, শিবপুর, মক্রবপুর ইউনিয়নের তুলাগাঁও, বাতড়া, রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের ছুপুয়া, রায়কোট, অলিপুর, রায়কোট দক্ষিণ ইউনিয়নের শ্যামিরখিল, ঝাটিয়াপাড়া, মৌকরা ইউনিয়নের তেতৈয়া, কেশতলা, চান্দাইশ, করাকোট, পৌঁছির, বটতলী ইউনিয়নের কাশিপুর, উল্লাখালি, ঢালুয়া ইউনিয়নের বদরপুর, বায়েরা, মগুয়া, মন্নারা, বক্সগঞ্জ ইউনিয়নের শুভপুর, কদমতলী, বড়কালী, কোকালী, পৌরসভার অশ্বদিয়া-সহ উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়নের অন্তত ১শ’ স্থানে মাটি কাটা হচ্ছে। ফলে ট্রাক্টরের দখলে চলে গেছে উপজেলার অধিকাংশ সড়ক। ট্রাক্টর গুলোর ধুলাবালির কারণে সড়কে চলাচলকারীরা চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। সড়কের পাশের বাড়ি ঘরে ধুলাবালি প্রবেশ করার ফলে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে অনেকের।
সোমবার সকালে উত্তর শাকতলী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাটি কেটে কৃষিজমি পুকুর বানিয়ে ফেলা হয়েছে। মাটি গুলো ভ্যাকু মেশিনে কেটে ট্রাক্টরে করে ইটভাটায় ও নতুন বাড়ি ভরাট করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মাটি কে কাটছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান, ভ্যাকু ও ট্রাক্টর গুলো উপজেলার বাঙ্গড্ডা গ্রামের মোহাম্মদ লিটনের। লিটন প্রভাবশালী হওয়ায় ভূক্তভোগী এলাকাবাসী তাকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।
স্থানীয় আশারকোটা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ স্বপন ও মনির হোসেন মিয়াজী বলেন, জমির উপরিভাগের সব মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। আবার অনেক জমি থেকে ১০ থেকে ১৫ ফুট গভীর করে মাটি কাটা হচ্ছে। এছাড়া মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে সড়কে উঠাতে সড়ক গুলোর বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও সড়কের পাশের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে এবং সড়কের আশপাশের বাড়ি ঘরে ধুলাবালির কারণে মানুষ বসবাসে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে বাঙ্গড্ডা গ্রামের ট্রাক্টর ও ভ্যাকু মালিক মোবারক হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমরা নাঙ্গলকোট পৌরসভা মেয়রের ছোট ভাই কোদালিয়া গ্রামের খোরশেদ আলমের কাছ থেকে প্রশাসনকে ম্যানেজ করার জন্য প্রতিটি ভ্যাকু ৫হাজার ও প্রতিটি ট্রাক্টর সড়কে চলাচলের জন্য ২হাজার টাকা দিয়ে মাসিক কার্ড নিয়েছি। এখন মাটি কাটা বা বহন করায় আমাদেরকে কেউ কিছু বলতে পারবে না। যদি বলে বিষয়টি খোরশেদ ভাই দেখবে।
অভিযুক্ত খোরশেদ আলম বলেন, সকল সাংবাদিক আমার সাথে দেখা করেছে আপনারাও দেখা করেন। কেন দেখা করতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখা হলে বুঝবেন।
নাঙ্গলকোট থানা অফিসার ইনচার্জ দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, মালতী কার্ডের বিষয়ে আমি আপনাদের কাছে জেনেছি, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা।
নাঙ্গলকোট উপজেলা কৃষি অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, কৃষি আবাদি জমির ৬ থেকে ১০ ইঞ্চি মাটি যদি কেটে নেয়া হয় তাহলে এই জমির যে ক্ষতি হবে সেই ক্ষতি পূরণ হতে ৮০/১০০ বছর সময় লাগবে। এ অপূরণীয় ক্ষতি থেকে বাঁচতে আমরা কৃষকদেরকে নিয়ে করা প্রত্যেকটি সভা সেমিনারে উদ্বুদ্ধ করে থাকি।
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি এবং বেশ কিছু অভিযান করে তাদেরকে শাস্তির আওতায় এনেছি। আজকেও রুবেল নামে এক ব্যাক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের অভিযান চলমান আছে এবং থাকবে।

Please follow and like us:

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা

সর্বশেষ সংবাদ