উদ্ধারকারী ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত নাঙ্গলকোটে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনার ৪দিন পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

প্রকাশিত: ১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০২৪

উদ্ধারকারী ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত নাঙ্গলকোটে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনার ৪দিন পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

মাঈন উদ্দিন দুলাল-
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের তেজের বাজার সংলগ্ন এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনার ৪দিন পর বৃহস্পতিবার ভোরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এর আগে বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটি উদ্ধার কাজে নিয়োজিত একটি উদ্ধারকারী ট্রেনের ইঞ্জিন নাঙ্গলকোটের হাসানপুর রেল স্টেশন এলাকার লুপলাইনে লাইনচ্যুত হয়। পরে বুধবার ভোর রাতে আরেকটি উদ্ধারকারী ট্রেন এসে ওই ইঞ্জিনটি উদ্ধার করে। গত রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের হাসানপুর ও গুণবতী স্টেশনের মধ্যবর্তী নাঙ্গলকোটের শিহর গ্রামের তেজের বাজার সংলগ্ন এলাকায় বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে ১৮টি বগি আলাদা হয়ে ৯টি লাইন থেকে ছিটকে পড়ে যায়। এ সময় ট্রেনের বগি ছিটকে গিয়ে রেলপথ সংলগ্ন ২টি বসত ঘরে পড়ে ঘর গুলো তছনছ হয়ে যায়। ওই রেল পথের তেজের বাজার এলাকার আপ লাইনের ২০৮ নং ব্রীজের কাঠের স্লিপার ভেঙ্গে গিয়ে ইঞ্জিন থেকে বগি গুলো আলাদা হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে ধারণা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী শিপন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের। দুর্ঘটনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের আপ লাইনের ৩শ’ মিটার লাইন স্লিপার থেকে খুলে রেলপথ থেকে অন্তত ১০০মিটার দূরে গিয়ে পড়ে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত যাত্রীদেরকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করে স্থানীয়রা। বগি গুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের উভয় লাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাাম-সিলেট, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর, চট্টগ্রাম-জামালপুর রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৫ঘন্টার উদ্ধার অভিযানের পর ডাউন লাইন চালু করে রেল কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ভোরে দুর্ঘটনা কবলিত আপলাইনের মেরামত শেষে লাইনচ্যুত হওয়া বগি গুলো উদ্ধার করায় আপ ও ডাউন লাইনে ৪দিন পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। দুর্ঘটনার পর রবিবার দুপুর থেকে সোমবার ভোর রাত পর্যন্ত ওই রেলপথে সকল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এছাড়াও লাইন মেরামতের জন্য সোমবার দুপুর থেকে ৫ঘন্টা ও মঙ্গলবার ৩ঘন্টা, বুধবার ৫ঘন্টা বন্ধ রাখা হয় ট্রেন চলাচল। এসময় ওই পথে চলাচলকারী ট্রেন গুলোকে আটকে রাখা হয় রেল পথের ফেনী ও নাঙ্গলকোট স্টেশনে। ট্রেন আটকে রাখায় এবং এক লাইন দিয়ে পারাপার হওয়ায় গত ৪দিন যাবৎ ট্রেন চলাচলে সৃষ্টি হয়েছে ধীরগতি, ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।
বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের উরকুটি গ্রামের আব্দুল মান্নান প্রকাশ মনা মিয়ার ছেলে কামাল হোসেন ৪ কিশোর মাদরাসা ছাত্রকে জড়িয়ে দেয়া একটি বক্তব্য দেশ ব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে এবিষয়ে রেলপথ মন্ত্রী জিল্লুল হাকিম দাবি করেন নাশকতাকারীরা এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। কামাল হোসেনের তথ্যমতে ও রেলপথ মন্ত্রীর বক্তব্যের পর লাকসাম রেলওয়ে থানায় রেলওয়ে পিডব্লিউ লিটন চাকমা বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করে। পরে পুলিশ নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাশ্ববর্তী চৌদ্দগ্রাম উপজেলার তেলিগ্রামের কাজী আমির হোসেনের ছেলে কাজী সামির (১৫), একই বাড়ির কাজী আবুল কাশেমের ছেলে কাজী আল আমিন (১৫), একই গ্রামের আবু হানিফের ছেলে শাকিবুল হাসান ফাহিম (১৪), আব্দুল মালেকের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন জিহাদকে (১৩) আটক করে কুমিল্লার আদালতে প্রেরণ করে। আটককৃত ৪ কিশোর চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ধোড়করা কাদেরিয়া ইসলামিয়া সিনিয়র আলিম মাদরাসার শিক্ষার্থী। মামলায় ওই মাদরাসা ছাত্রদের বিরুদ্ধে রেললাইনের বিয়ারিং প্লেট খুলে নেয়ার অভিযোগ করা হয়। আটককৃত মাদরাসা ছাত্ররা তাদের জবান বন্দিতে ঈদুল ফিতরের জন্য আতশবাজি কিনতে রেললাইনের বিয়ারিং প্লেট খুলে নিয়ে বিক্রি করতে চেয়েছে বলে স্বীকার করে বলে জানান পুলিশ। দুর্ঘটনার ১দিন পর কামাল হোসেন ওই ৪ কিশোরকে জড়িয়ে বক্তব্য দেয়ার পর থেকে সে বাড়ি-ঘরে তালা লাগিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। কামাল পালিয়ে যাওয়ায় পর থেকে স্থানীয়দের মধ্যে কামালের দেয়া বক্তব্য নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন সে কারো মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে ওই কিশোরদের জড়িয়ে বক্তব্য দিয়ে থাকতে পারে।
নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-প্রচার সম্পাদক উরকুটি গ্রামের মামুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, আমাদের গ্রামের কামাল হোসেনের বক্তব্য অনুযায়ী বিষয়টি নিয়ে দ্রু¤্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তদন্ত প্রয়োজন, তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিষয়টি উঠে আসবে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী শিপন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের পাশেই আমার বাড়ি। ঘটনার দিন বিকট শব্দ শুনে রেল লাইনে ছুটে গিয়ে দুর্ঘটনার বিষয়টি দেখতে পেয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রশাসনকে ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল হাছান ভূঁইয়া বাছিরকে অবহিত করি। দুর্ঘটনাটি যে ব্রীজে ঘটেছে ওই ব্রীজটি দীর্ঘদিন যাবৎ নড়বড়ে অবস্থা, কাঠের স্লিপার গুলো নষ্ট হয়ে গেছে, নাটভল্টু ও ক্লিপ গুলো ঝরে পড়ে গেছে। এমন ঝুঁকি নিয়ে এ পথে ট্রেন চলাচল করলেও বীজটি মেরামতে কর্তৃপক্ষ কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। যদি আগে থেকে ব্রীজটি মেরামত করতো তাহলে এ দুর্ঘটনা ঘটতো না। আমার ধারণা এখানে নাশকতার কোন বিষয় নেই, ব্রীজটি পূর্বে মেরামত না করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে নাঙ্গলকোট রেলস্টেশন মাস্টার জামাল হোসেন বলেন, উদ্ধারকারী ট্রেনের লাইনচ্যুত ইঞ্জিনটি বৃহস্পতিবার ভোরে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া, লাইন মেরামত হওয়ায় আপ এবং ডাউন লাইনে ট্রেন স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করছে।

Please follow and like us:

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা

সর্বশেষ সংবাদ