কবিও কবিতার মানুষ এস এম আবুল বাশার আজিম উল্যাহ হানিফ

প্রকাশিত: ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২৫

কবিও কবিতার মানুষ এস এম আবুল বাশার আজিম উল্যাহ হানিফ

কবিও কবিতার মানুষ এস এম আবুল বাশার
আজিম উল্যাহ হানিফ
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার যে ৩ জন ইতিহাস লিখেছেন,তার মধ্যে একজন হলেন কবি ও উপন্যাসিক এস এম আবুল বাশার । তিনি ১৯৩৫ সালের ৭ মার্চ কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার মৌকারা ইউনিয়নের কালেম গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। পিতা মোহাম্মদ আবদুল গণি, মাতা মোসাম্মদ রাবেয়া খাতুন ওরফে মেতুনী বিবি। তিনি ৫ ছেলে এবং ১ কন্যা সন্তানের জনক। তিনি ও গ্রন্থাকার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নন। অথবা কোনো সরকারী চাকরীজীবীও নন, ১৯৫৩ সালে এসএসসি ফেল করার পরও এই স্বল্পতম লেখাপড়ার মধ্য দিয়েই তিনি ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধার রচনার সময় একটি কবিতা রচনা করে পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে বেশ সাড়া ফেলে দেন। তিনি ছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মধুসুদূন দত্তের সাহিত্যের একজন ভক্ত। এবং সমসাময়িক শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আল মাহমুদ তাদের কবিতা ও লেখনী পড়ে কবিতা ও দেশ প্রেমের প্রতি আসক্ত হয়ে কলম ধরেছেন, কবিতা লিখেছেন, তার কবিতা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার। তিনি ইতিমধ্যে কবিতা, ছড়া, গান, প্রবন্ধ, কলাম, জীবনী, আত্মজীবনী, চিঠিপত্র, রেসিপি, উপন্যাস, গল্প, নাটক, ভারত ভাগের কাহিনী, নাঙ্গলকোট উপজেলার ইতিহাস রচনা করেছেন। তিনি সম্মাননা পেয়েছেন সর্বমোট ৩টি। ৩০ বছর বয়সে ১৯৬৫ তে পাক ভারত যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গ্রামের বাড়ি এলাকায় এসে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ওই সময় খন্ড আকারে লেখালেখিও ভাষাসংগ্রামের প্রেক্ষাপট নিয়ে লিখেছেন। সেই সময় লাকসাম লেখক সংঘের সুবাধে চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম হাইস্কুল, কুমিল্লা আদালত রোডেই বেশ কয়েকবার গিয়েছিলেন। এই সকল খন্ডিত আড্ডায় এসেছেন তাদের মধ্যে ছিলেন-কাজী জাফর আহমেদ, আবদুল মালেক মজুমদার, সচিব আবদুল করিম মজুমদার, মাওলানা অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তার, লেখক আরিফুর রহমান, আবদুল বাসেত মজুমদার, জয়নাল আবেদীন ভূইয়া, ওমর আহমেদ মজুমদার, আবদুল আউয়াল , জালাল আহমেদ, সাদেক হোসেন চেয়ারম্যান, বদিউল আলম মজুমদার, মমিন চেয়ারম্যান, আহমেদ আলী, আবদুল জলিল, জিন্নতের রহমান, আবদুল খালেক ভুলু, কামারুজ্জামান খান, রফিকুল হোসাইন, আবুল কালাম,আবদুল ওহাব, মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী, আবুল খায়ের মুসলেহ উদ্দিন প্রমুখ। ১৯৮০/৮১ সালের দিকে নাঙ্গলকোট উপজেলা সৃষ্টিতে ওমর আহমেদ মজুমদার, জয়নাল আবেদীন ভূইয়া, সাদেক হোসেন চেয়ারম্যান, ভিপি হুমায়ুন কবির, মোখলেছ চেয়ারম্যান, আবদুল খালেক ভূলু, অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তার, অধ্যক্ষ আবদুল মন্নান, আবদুল করিম মজুমদার, আবদুল মালেক মজুমদারদের সারিতে তিনিও ছিলেন। কবি এস এম আবুল বাশার তার প্রায় ৮৯ বছরের জীবনের ৭০ বছরের সাহিত্য সাধনায় ৬২ সাল তথা আইয়ুব খানও ইয়াহিয়া খানের শাসনামল ছিল টানিং পয়েন্ট। এই সময়ে প্রচুর লিখেছেন। একক বই প্রকাশ করেছেন মাত্র ২টি। উপন্যাস গ্রন্থ ‘সাফল্যের সিড়ি’ ২০০২ সালে অমর একুশে বইমেলায়, কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতায় বিশ^ দেখি’ ২০১৮ সালে অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়। এছাড়াও কয়েক শতাধিক গ্রন্থ, ম্যাগাজিন, পুস্তকে তার কবিতা ও লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে গদ্য স্টাইলের কবিতাও আছে। কবিতা ছাড়াও তিনি সাহিত্যের নানান শাখায় লিখে গেছেন। প্রায় ৩ শতাধিক গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। পুরষ্কার পেয়েছেন, নাঙ্গলকোট রাইটার্স এসোসিয়েশন কর্তক ২০১১ ও ২০১৮ সালে, নাঙ্গলকোট সাংবাদিক সমিতি কর্তক ২০১৯, নাঙ্গলকোট টাইমস কর্তক ২০১৭, ইরান সংস্কৃতি কেন্দ্র ২০১৭। কবি তার শেষ জীবনে ডায়েরীতে লিখে গেছেন-“মনে হচ্ছে, কবিতাই আমার সব। কবিতাকে ঘিরে দীর্ঘ ৬০ বছর বসবাস করছি। গোটা বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ঘুরেছি। নানান জায়গায় কবি ও কবিতার আড্ডায় গিয়েছি। তবে বেশকিছুদিন যাবত যেখানেই দাওয়াত পাচ্ছি, ফিরাচ্ছি না কাউকে। কবিতার জন্য শরীরটাকেও শপে দিয়েছি। শরীর যতক্ষন সুস্থ থাকবে ততক্ষন যেখানেই ডাক পড়বে, লোকেশন জানা থাকবে, সেখানেই ছুটবো, কবিতার কথা বলবো। কেননা কবিতাই হলো আমার বেচেঁ থাকা। কেননা আমি তো জীবনের মাঝপথে ১০ বছর বাদ দিলে বাকি ৭৮ বছরই গ্রামে আছি। সবকিছু ছাড়তে পারলেও গ্রাম ছাড়া আমার পক্ষে কখনো সম্ভব হয়নি। গ্রামকে আমি আকঁড়ে ধরে আছি। যার মূলে সবর্দা রেখেছি এই দেশের মান-সম্মান,অভিমান, নারী-পুরুষ, মা মাটিসহ প্রাকৃতিক দৃশ্যসহ ভাঙ্গা গড়ার কাহিনী। সত্যিই সাহিত্যের উপজীব্য করে তোলার চেষ্টা করেছি। আমি যেমন খ্যাতিমান ও বড় কবিদের সানিধ্য পেয়েছি তেমনি বর্তমান সময়ের এই দশকের কবিদের সম্মান ও ¯েœহ করতে কুন্ঠাবোধ করি না। কেননা তারাই তো আগামীদিনের বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল প্রদীপ। বর্তমানে চলছে ফেইসবুকে কবিতা চর্চা। এর বিপক্ষে কোন মন্তব্য না করে শুধু বর্তমান সময়ের তরুন কবি ছড়কারদের বলবো নকল ও অনুসরণ করে কিংবা কপি করে বড় হওয়া যায় না। তাই চুরি করার বদঅভ্যাস বাদ দিতে হবে। এতে জায়গা মতো নয়তো ধরা খেতে হবে। কেননা ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না। সাহিত্যের ও একটা মাপকাঠি আছে। সেই মাপকাঠি অনুসারে সাহিত্যের নিয়মকানুন কলা কৌশল মেনে চলতে হবে। এতে করে সাহিত্যের একজন হয়ে উঠতে যে কাউকে সাহায্য করবে। যাক মোট কথা হলো কবিও কবিতার সানিধ্যে থেকে এই জীবনটাকে উপভোগ করেছি। বেশ ভালোই কাটালাম সময়গুলোকে। বহু তরুন কবিদের সম্মানসহ বহু মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও কোন ধরণের আফসোস নেই আমার। কেননা আমার কলামের শিরোনামের কথাটি আবার উল্লেখ করে বলতে চাই,কবি বলেছেন- কবিতাই হলো আমার বেঁেচ থাকা। কবিতাকে আমি ভালোবাসি।” কবি ও কলামিস্ট এস এম আবুল বাশার ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা ১ টা ৩০ মিনিটে শেষ নি:শ^াস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। নাঙ্গলকোট রাইর্টাস এসোসিয়েশন, জাতীয় কবিতা মঞ্চ, কাব্যকথা সাহিত্য পরিষদ, লাকসাম লেখক সংঘ, কুমিল্লা কবি ফোরাম, নাঙ্গলকোট রোটারী ক্লাবের সদস্য, নাঙ্গলকোট উপজেলা সাংবাদিক সমিতি, নাঙ্গলকোট প্রেসক্লাব, নাঙ্গলকোট বাজার পরিচালনা কমিটি, কালেম জামে মসজিদ, নাঙ্গলকোট টাইমস, বর্তমান টিভি, আলোর দিশারী,সময়ের দর্পণ, সাপ্তাহিক লাকসাম, লাকসাম বার্তা,সাপ্তাহিক নাঙ্গলকোট পত্রিকার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, কবি আসাদ চৌধুরী স্মৃতি সংসদ, সাংবাদিক সায়েম মাহবুব স্মৃতি সংসদ, ভাষাসৈনিক আবদুল জলিল পরিষদ, সাংবাদিক শামছুল করিম দুলাল স্মৃতি সংসদ, ভিপি হুমায়ুন কবির স্মৃতি সংসদ, ভিপি সাদেক হোসেন চেয়ারম্যান স্মৃতি সংসদ, কবি মাইদুল ইসলাম মুক্তা স্মৃতি সংসদ, কবি তছলিম হোসেন হাওলাদার স্মৃতি সংসদ, সোলাইমান বিএসসি স্মৃতি সংসদের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনীতিতে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ’র সাথে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন।

ফেইসবুকে আমরা

সর্বশেষ সংবাদ