একজন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক ‘আবুল মনসুর আহমদ’

প্রকাশিত: ৬:৪১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১১, ২০২৩

একজন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক ‘আবুল মনসুর আহমদ’

আজিম উল্যাহ হানিফ-
আবুল মনসুর আহমদ (১৮৯৮-১৯৭৯) ১৮৯৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ধানিখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম আবদুর রহিম ফরায়েজী, মাতার নাম জাহান খাতুন। তিনি ছিলেন (ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ) সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও আইনবিদ। তিনি ১৯১৭ সালে ম্যাট্টিক পাশ করেন। ১৯১৯ সালে এইচএসসি পাশ করেন। কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইন বিষয়ে পাশ করেন। এই সময়টা ছিল খিলাফত আন্দোলনও অসহযোগ আন্দোলনের সময়কাল। ১৯১৮-১৯ সালে তিনি কবর পূজা ও পীর পূজাসহ হিন্দু-মুসলিম সমাজের সকল কুসংস্কারের সরাসরি বিরোধীতা শুরু করেন। তিনি ৯ বছর ময়মনসিংহে আইন চর্চা করেন। তারপর কলকাতায় পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। গোড়া মোহাম্মদী পরিবারের সন্তান ছিলেন আবুল মনসুর আহমদ। লাল তুর্কি টুপি মাথায় মোহাম্মদীর পক্ষে তর্কেও যেতেন। ঘটনাক্রমে একদিন তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের হেড মৌলভী আলী নেওয়াজও শিক্ষক মৌলভী শেখ আবদুল মজিদের সংস্পর্শে আসেন। এদের সাহচর্যে আবুল মনসুর প্রথম উদারতার পাঠ গ্রহণ করেন। তার এই উদারতার বহি:প্রকাশ ঘটে অন্যান্য ধর্মালম্বীদের প্রতি।

তিনি কলকাতায় গিয়ে সাংবাদিতায় জড়িয়ে পড়েন। সাংবাদিক হিসেবে নানান সংবাদপত্রে কাজ করেন। যেমন-ইত্তেহাদ, সুলতান, মোহাম্মদী, নাভায়ু পত্রিকা। ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলার কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইত্তেহাদ এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তৎকালীন কৃষক ও নবযুগ পত্রিকায়ও কাজ করেন তিনি। তিনি ছিলেন চল্লিশ, পঞ্চাশ, ষাটের দশকজুড়ে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে অবিরাম প্রচারণাকারী। ১৯৪৮-১৯৫২ ও তার পরবর্তী সময়ে ভাষাযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইত্তেহাদের সম্পাদক হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখেন।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কংগ্রেস আন্দোলন সমূহের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পরে তিনি বাংলার মুসলিম লীগের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং ১৯৪০ সাল থেকে পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে য্ক্তু হন। তিনি ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নিবার্চনী কর্মসূচি ২১ দফার অন্যতম প্রণেতা ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হয়ে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের মন্ত্রীসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৪৯ সালে গঠিত আওয়ামী মুসলিমলীগের মনোনয়নে ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হন। এই বছর পাকিস্তানের সংবিধান প্রথমবারের মত রচিত হয়। ১৯৫৬-৫৭ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারি হওয়ায় তিনি কারারুদ্ধ হন এবং দীর্ঘ ৪ বছর পর ১৯৬২ সালে মুক্তি পান। পূর্ব বাংলার মঙ্গলের জন্য তিনি নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, বিশেষ করে শিল্পায়নে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। আওয়ামীমুসলিম লীগকে পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠাতা নেতা ছিলেন। ১৯৫৩-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত দলের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৯ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিতে যোগ দিয়ে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশ নিয়ে মনমনসিংহ-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আবুল মনসুর আহমদ একজন শক্তিমান লেখক ছিলেন। তিনি ব্যঙ্গাত্মক রচনায় বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। আয়নাও ফুড কনফারেন্স গল্পগ্রন্থদ্বয়ে তিনি মুসলিম সমাজের গোঁড়ামি, ধর্মান্ধতা, ভন্ডামিসহ নানা কুসংস্কারের ব্যঙ্গ করেছেন তীক্ষè দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে। তার গ্রন্থ সমূহ: ব্যঙ্গররচনা-আয়না, ফুড কনফারেন্স, গালিভারের সফরনামা। স্মৃতিকথা-আত্মকথা, আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, শেরে বাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু। অন্যান্য রচনাসমূহ: সত্যমিথ্যা, জীবনক্ষুধা, আবে হায়াত, হুযুর কেবলা,বাংলাদেশের কালচার, আসমানী পর্দা। বাংলা একাডেমী আবুল মনসুর আহমদ রচনাসমগ্র নিয়ে কয়েক খন্ডে প্রকাশনা করেছে। সাহিত্য চর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে দেশের সবোর্চ্চ বেসামরিক পুরস্কার হিসাবে পরিচিত স্বাধীনতা পুরষ্কার প্রদান করা হয় তাকে। এছাড়াও তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার ১৯৬০ সালে পেয়েছিলেন, নাসিরুদ্দিন স্বর্ণপদকেও ভূষিত হন। ১৯৭৯ সালের ১৮মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার ২জন সন্তান রয়েছে। নাম তাদের মাহবুব আনাম ও মাহফুজ আনাম।

Please follow and like us:

ফেইসবুকে আমরা

সর্বশেষ সংবাদ