কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের চর জামুরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তাহেরা বেগমের বিরুদ্ধে অনৈতিক কার্যকলাপ, শিক্ষক, অভিভাবক, কমিটির সদস্য ও স্থানীয়দের সাথে দস্যুতা মূলক আচরন, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর-সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। স্মারক লিপিতে দুর্নীতিগ্রস্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তাহেরাকে অন্যত্রে বদলী করে বিদ্যালয়টিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার দাবি জানান এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগের আলোকে বুধবার নাঙ্গলকোট উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মহিব উল্লাহ ও সুমন চন্দ্র দেব নাথ সরেজমিনে তদন্ত করেন।
স্মারক লিপিতে স্থানীরা উল্লেখ করেন ২০১৭ সালে অভিযুক্ত তাহেরা খাতুন সহকারি শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ার পর সে ও তার স্বামী ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি আবুল হাশেমের দুর ব্যবহারে প্রধান শিক্ষক আওরঙ্গজেব ভূঁইয়া ও মাঈন উদ্দিন, সহকারি শিক্ষক তাসলীমা নুর ও সেলিনা আক্তার অন্যত্রে বদলি হয়ে চলে যান। শিক্ষকদের তাড়িয়ে দিয়ে ২০২২ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব নেয় তাহেরা, এর পর থেকে শুরু হয় তার দুর্নীতি। ২০২২-২৩ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামত, স্লীপ ও প্রাক-প্রাথমিকের প্রায় ৬ লক্ষ টাকা সে ও তার স্বামী আত্মসাৎ করে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে দুর্ব্যবহারের ফলে বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মাত্র ১৫ জন, কিন্তু হাজিরা খাতায় ৭০-৮০জন দেখাইয়া উপবৃত্তির টাকা অনিয়ম ও দূনীর্তির মাধ্যমে আত্মসাথ করছে তাহেরা। এছাড়াও ২০ কিলোমিটার দূরের তার বাবার বাড়ি অথচ তার আপন ভাতিজি মোবাশ্বেরা জান্নাত, ভাতিজা তৌহিদ হোসেনের নাম দেখিয়ে তাদের নামে উপবৃত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করে টাকা আত্মসাৎ করছে।
ইতিপূর্বে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাহেরা প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার তার প্রতিদিনের রুটিন। সহকারি শিক্ষিকা রোকসানা বেগমকে অফিসে নামাজরত অবস্থায় মাথার চুল ধরে টেনে হিচড়ে বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দেয় তাহেরা। আরেক সহকারি শিক্ষিকা তাছলিমা নুরকে স্কুল ছাত্রদের ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে দাওয়া করে স্কুল এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়। এঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষিকা রোখসানা ও তাছলিমা নূর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে তাহেরার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন এবং তাদেরকে অন্যত্রে বদলি করে জীবন রক্ষার দাবি জানান।
তাহেরার এমন স্বৈরাচারী কায়দায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর সাথে দুর্ব্যবহার, সরকারি টাকা আত্মসাৎ-সহ অনিয়মের বিষয়ে একাধিক বার অভিযোগ হয়। শিক্ষা অফিস থেকে হয়েছে কয়েক দফা তদন্ত। তার স্বামী আবুল হাশেম আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পুনরায় এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত রবিবার সরে জমিনে তদন্ত করেছে নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।
এ ব্যাপারে চরজামুরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাবেক সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ নূরুল আমিন, দাতা সদস্য সাবেক মেম্বার জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া, মাওলানা কবি নূরুল আনোয়ার আফসারী বলেন, তার অত্যাচার, অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ, অর্থ আত্মসাতে শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবক আমরা এলাকাবাসীর অতিষ্ঠ। আমরা বহুবার এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি কিন্তু তার স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় তার কোন বিচার হয়নি এখন আমরা পুনরায় আবেদন করেছি ন্যায় বিচারের আশায় আশা করি তাকে এ প্রতিষ্ঠান থেকে অন্যত্রে বদলি করে একজন দক্ষ প্রধান শিক্ষক এই স্কুলে নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
অভিযুক্ত তাহেরা খাতুন বলেন, আমার সহকারি শিক্ষিকাগণ স্কুলের কথা বাহিরে ছড়িয়েছে, যার কারণে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে।
তাহেরা খাতুনের স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসেম বলেন, আমার বিরুদ্ধে ৪০ হাজার টাকার যে অভিযোগ করেছে ওই ৪০ হাজার টাকা স্কুলের বরাদ্দ নয়, মন্ত্রীর বরাদ্দ, তারপরও আমি স্কুল মাঠ ভরাট করেছি।
নাঙ্গলকোট উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মহিব উল্লাহ ও সুমন চন্দ্র দেব নাথ বলেন, তদন্ত চলমান আছে, তদন্ত শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট পেশ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-আমিন সরকার বলেন, অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করার নির্দেশ প্রদান করেছি, তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।