মৌকরা কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি

প্রকাশিত: ৩:১৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪

মৌকরা কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি

কেফায়েত উল্লাহ মিয়াজী:
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের মৌকরা দরবার শরীফ কর্তৃক পরিচালিত মৌকরা দারুসসুন্নাত নেছারিয়া কামিল মাদরাসা, দ্বীনিয়া, হেফজখানা ও মহিলা মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বৈষম্য, অনিয়ম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বুধবার সকালে নাঙ্গলকোট উপজেলা সদরের বটতলায় মানববন্ধন ও একই দিন দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুরাইয়া আক্তার লাকীর নিকট ১৯ দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা নাঙ্গলকোট বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভ মিছিলটি বটতলা থেকে শুরু করে বাজারের প্রধান-প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ করে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মৌকরা মাদরাসার কামিলে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী আব্দুল আওয়াল ফয়সাল, জোবায়ের হোসেন ও হাছান উদ্দিন। এছাড়াও ক্লাস বর্জন করে মানববন্ধনে ওই মাদরাসার শত-শত শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা ১৯টি দাবি উপস্থাপন করেন, দাবি গুলো হলো ছাত্র-শিক্ষকদের উপর অনৈতিক টর্চার ও পদক্ষেপ গ্রহণকারী, পদ-যোগ্যতা-ক্ষমতার অনাধিকার চর্চাকারী, চরম দুর্নীতিবাজ কমপ্লেক্স সুপার মাওলানা আনোয়ার হোসেনকে আলিয়া মাদরাসার সহকারী শিক্ষক পদসহ সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি। সকল বৈষম্য ও অনৈতিকতায় সহযোগিতা ও বৈধতা দান, ছাত্র নির্যাতনের মৌনসমর্থন করার কারণে অধ্যক্ষ মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাহেবকে সার্বিক বিষয়ে নিজের অবস্থান খোলাসা করতে হবে, অন্যথায় আলিয়া মাদরাসা সংক্রান্ত সকল দায় স্বীকার করতে হবে। গত ১৫ বছরে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও বিভিন্ন সরকারি অনুদান ব্যয়ের তদন্ত করে প্রকাশ করতে হবে। লিল্লাহ বোর্ডিংসহ দরবারের সকল আয়-ব্যয় নিরপেক্ষ অভিজ্ঞ নীরিক্ষক ব্যক্তি দিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে। আলিয়ার ছাত্রাবাস ভবনের সংস্কার করতে হবে এবং টয়লেট ওজুখানার ব্যবস্থা করতে হবে। আলিয়া মাদরাসার লুটপাট বন্ধ করে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও শিক্ষার্থী বান্ধব পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে। অনার্স ও কামিল শ্রেণীকক্ষের জন্য নতুন সরকারী ভবনে নির্দিষ্ট একাডেমিক শ্রেণী কক্ষ, ফ্যান, লাইট ও ফার্নিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বীনিয়া ও মহিলা মাদরাসায় ভালো গণিত ও ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। মহিলা মাদরাসার জন্য পুরুষ শিক্ষক বাদ দিয়ে মহিলা শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে এবং আরবী বিষয়ের জন্য ভালো মানের মহিলা অথবা বয়স্ক পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। দ্বীনিয়া মাদরাসার লুটপাট বন্ধ করে ভালো মানের কামিল পাশ করা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আরবী প্রভাষক নিয়োগ দিতে হবে। অন্যথায় নবম, দশম ও আলিমের ছাত্রদেরকে আলিয়া মাদরাসায় ক্লাস করার সুযোগ দিতে হবে। কোন শিক্ষার্থী দিয়ে রান্নাঘরে কাজ করাতে পারবেনা। নিয়মিত বাবুর্চি রেখে রান্নার কাজ করতে হবে। মহিলা মাদরাসা মেইন রোডের সাথে বাউন্ডারি দিয়ে পর্দার ব্যবস্থা করতে হবে এবং শ্রেণীকক্ষে অসহনীয় গরম প্রতিরোধে সিলিং করা সহ প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত করতে হবে। ছাত্রাবাসে পঁচাবাসী খাওয়া পরিবেশন বন্ধ করতে হবে। যেহেতু ছাত্রদের থেকে মাসিক মিল চার্জ নেয়া হয় তাই মানসম্পন্ন খাবার পরিবেশন করতে হবে এবং তা নির্দিষ্ট সময়ে পরিবেশন করতে হবে। দ্বীনিয়া মাদরাসার ছাত্রদেরকে শাসনের নামে শারীরিক মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। কোন ছাত্রকে খানকার দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা যাবেনা। হেফজখানার জন্য ভালো হাফেজ নিয়োগ দিতে হবে এবং মেঝেতে কার্পেট দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ভালো নূরানী শিক্ষক রাখতে হবে। মহিলা মাদরাসার ছাত্রীদের কুরআন শিক্ষার জন্য বয়স্ক ক্বারী নিয়োগ দিতে হবে। ছাত্রী ও শিক্ষিকার জন্য মানসম্পন্ন আলাদা টয়লেট এবং ওজুখানা নির্মাণ করতে হবে এবং নামাজের কক্ষ ও কমন রুমের ব্যবস্থা করতে হবে। হেফজখানার জন্য মানসম্পন্ন শ্রেণীকক্ষ ও আবাসিক ছাত্রবাসের ব্যবস্থা করতে হবে। ছাত্রদের উপর সকল অনৈতিক নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধ করে শিক্ষার্থী বান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে হবে।
এ ব্যাপারে নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার লাকি বলেন, আমাকে শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি দিয়েছে, এবং মৌখিক ভাবে অবহিত করেছে। আমি উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছি।

Please follow and like us:

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা

সর্বশেষ সংবাদ