প্রকাশিত: ৮:০৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪
কেফায়েত উল্লাহ মিয়াজী :
কুমিল্লার নাঙ্গলকেটের ঢালুয়া ইউনিয়নের উরকুটি গ্রামের মোহাম্মদ লিটন (৩৪) ও তার সন্তান সম্ভবা স্ত্রী রহিমা আক্তারকে (২২) হাত-পা ও চোখ বেঁধে পাশ্ববর্তী চান্দলা গ্রামে নিয়ে বুধবার রাত ৮টার দিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে লিটনের প্রথম স্ত্রী ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে। পরে তাদের আত্মচিৎকার শুনে স্থানীয়রা নাঙ্গলকোট থানা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তাদেরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। হামলার ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন লিটনের প্রথম স্ত্রী একই ইউনিয়নের চান্দলা গ্রামের আলী মিয়ার মেয়ে আছমা আক্তার (৩০), তার ভাই ইউসুফ (৩৫), জাবেদ (২৫), বোন খুকি বেগম (৪০), পারভিন বেগম (৪৫), খুকির ছেলে রাফি (১৯) ও পারভিনের ছেলে আব্দুল্লাহ (২০)। এছাড়াও লিটনের দ্বিতীয় স্ত্রী’কে চোখ বাঁধা অবস্থায় কয়েক জন মিলে ধর্ষণ চেষ্টা করে বলে জানান ভূক্তভোগী রহিমা বেগম। নির্যাতনের ঘটনার পর থেকে সন্তান সম্ভবা রহিমা বেগমের রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
নির্যাতনের শিকার মোহাম্মদ লিটন বলেন, আমি ২০১১সালে প্রথম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। এরপর থেকে দীর্ঘ ১২ বছরের সংসারে আমাদের কোন সন্তান নেই। আমি বিয়ের আগে পরে ১৪ বছর যাবৎ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে ছিলাম। আমার প্রবাসের সকল আয় প্রথম স্ত্রী’র কাছেই ছিল। পরে আমি গত ২ বছর পূর্বে একে বারে দেশে চলে আসি। গত দেড় বছর পূর্বে আমি জীবিকার তাগিদে ঢাকায় একটি খাবার হোটেলে কাজ শুরু করি। এরই মধ্যে যেহেতু আমার কোন সন্তান নেই যার ফলে আমি দ্বিতীয় বিবাহের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ঢাকায় পরিচয় হওয়া ময়মনসিংহ জেলার ধৌবাউড়া উপজেলার পতাম গ্রামের আবুল কালাম আজাদের মেয়ে রহিমা আক্তারকে গত ১বছর পূর্বে বিয়ে করি। বিয়ের পর আমি আমার দ্বিতীয় স্ত্রীকে এক বার বাড়িতে নিয়ে আসি, সে এখন ২মাসের সন্তান সম্ভবা। ঢাকায় চাকুরি করে আমি যা বেতন পাই তা দুই স্ত্রী’রকে সমান ভাগে ভাগ করে দিই। গত মাসের বেতন এখনো না পাওয়ায় আমি প্রথম স্ত্রীকে টাকা পাঠাতে না পারায় গত সোমবার আমার প্রথম স্ত্রী ও তার ভাই ইউসুফ গিয়ে আমাকে জোর করে হোটেল থেকে কাজের পোষাক পরা অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে আসে। আমি বাসায় না ফেরায় দুই দিন অপেক্ষা করে আমার দ্বিতীয় স্ত্রী আমাকে খোঁজতে বুধবার সকালে বাড়িতে আসে, সে বাড়িতে এসে ঘরে ঢুকার আগেই আমার প্রথম স্ত্রী তাকে চুল ধরে কিল ঘুষি দিতে থাকে। পরিবেশ খারাপ দেখে আমি দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে আবার ঢাকায় চলে যেতে চাইলে আমাদের গ্রামের রেল গেইট এলাকায় আমার প্রথম স্ত্রী ও তার ভাই, বোন, ভাগিনারা আমি ও আমার দ্বিতীয় স্ত্রীকে আক্রমন করে মারপিট শুরু করে। এসময় আমাদের গ্রামের লোকজন তাদের হাত থেকে আমাদেরকে উদ্ধার করে দ্রুত ঢাকায় চলে যেতে বলে। পরে আমরা সিএনজি অটোরিক্সা যোগে ঢাকায় চলে যাওয়ার সময় চিওড়া এলাকা থেকে পুনঃরায় তারা আমাদেরকে নামিয়ে জোরপূর্বক অপর একটি সিএনজিতে উঠিয়ে চোখ বেঁধে আমার প্রথম স্ত্রীর বাবার বাড়ি চান্দলা গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে তারা আমাকে ও আমার দ্বিতীয় স্ত্রীকে হাত, পা বেঁধে লাঠি ও রড দিয়ে একঘন্টা ব্যাপী বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে আমাদের বাঁচার আকুতি শুনে স্থানীয়রা নাঙ্গলকোট থানায় ফোন করলে পুলিশ গিয়ে আমাকে ও আমার স্ত্রী’কে উদ্ধার করে।
নির্যাতনের ঘটনায় গুরুতর আহত লিটনের দ্বিতীয় স্ত্রী রহিমা আক্তার বলেন, আমি আমার স্বামীকে ঢাকায় কোথাও খোঁজে না পেয়ে ও ফোন বন্ধ পাওয়ায় তাকে খোঁজতে বাড়িতে আসলেই আমাকে চুল ধরে মারপিট শুরু করে। সেখান থেকে আমার স্বামী আমাকে নিয়ে ঢাকায় রওয়ানা করলে প্রথমে তাদের গ্রামের রেল গেইটে ও পরে রাস্তা থেকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে হাত-পা বেঁধে কিল, ঘুষি, লাথি মেরে ও পরে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আমি দুই মাসের সন্তান সম্ভবা। ওই স্থানে উপস্থিত থাকা কয়েকজন পুরুষ আমাকে আলাদা একটি কক্ষে নিয়ে আমার পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়। এসময় আমি জোরাজুরি করায় তারা আমার তল পেটে কয়েকটি লাথি মারলে আমার রক্তক্ষরণ শুরু হয় ও পরে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আমি প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে দরজায় তালা লাগানো থাকায় ও কাউকে না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে নাঙ্গলকোট থানা অফিসার ইনচার্জ এ.কে ফজলুল হক বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক-শফিকুর রহমান চৌধুরী (এম এ)
বার্তা সম্পাদক- মাঈন উদ্দিন দুলাল
সহ-সম্পাদক- মোহাম্মদ আল আমিন
প্রধান সম্পাদক-০১৬০১৯২০৭১৩
নির্বাহী সম্পাদক-০১৯১১২৫৭৪৯৬
বার্তা সম্পাদক-০১৭১৬০২১১৪৫
ইমেল-nangalkottimes24@gmail.com
জোড্ডা বাজার,নাঙ্গলকোট,কুমিল্লা।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৪-২০২৪।
ফেইসবুক- facebook.com/nangalkottimes24
Design and developed by AshrafTech