মাঈন উদ্দিন দুলাল-
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ভাতা দেয়ার কথা বলে ও মায়ের ভাতা আবেদনে পুত্রের স্বাক্ষর লাগবে বলে একই পরিবারের ৩জনের কাছ থেকে সাদা কাগজ ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে এখন ৪২লাখ টাকা দিতে হুমকি ধমকি ও হামলার অভিযোগ উঠেছে বাচ্চু মিয়া নামে এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত বাচ্চু মিয়া উপজেলার পেরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক সদস্য ও কাকৈরতলা গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে। এ ঘটনায় রবিবার দুপুর ১টার দিকে স্থানীয় কাকৈরতলা বাজারে একই গ্রামের বৃদ্ধ রিকশা চালক আব্দুল খালেকের উপর হামলার ঘটনায় ভূক্তভোগী পরিবার জীবন বাঁচাতে জাতীয় জরুরী সেবায় ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে। এছাড়াও সুদের টাকার জন্য কাকৈরতলা গ্রামের আব্দুল ওহাবের টিন সেড ঘর খুলে নেয়া, একই গ্রামের মানসিক প্রতিবন্ধী নুর মিয়ার স্ত্রীর জমি লিখে নেয়া, ওমর ফারুকের কাকৈরতলা বাজারে দোকান ঘর দখল, পাশ্ববর্তী বড় স্বাঙ্গীশ্বর গ্রামের আবুল কালাম মজুমদারের গরু নিয়ে যাওয়া, একই গ্রামের মোজ্জামেল হোসেনের জমি লিখে নেয়া, কাদবা গ্রামের রিকশা চালক আব্দুল মালেকের বসত বাড়ি লিখে নেয়া ও কাকৈরতলা গ্রামের খন্দকার বাড়ির আবুল হোসেনকে সুদের টাকা পাওয়ার দাবি করে কাকৈরতলা বাজারে গাছের সাথে বেঁধে রাখার অভিযোগ রয়েছে মেম্বার বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে।
ভূক্তভোগী আব্দুল খালেক বলেন, আমার বসত ঘরটি ভেঙ্গে যাওয়ায় আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার বাচ্ছু মিয়ার কাছ থেকে ২০১৪ সালে ৭০হাজার টাকা সুদে নিয়ে ঘর মেরামত করি এবং ২০১৬সালে পারিবারিক একটি সমস্যায় পড়ে আরো ১লাখ টাকা মেম্বারের কাছ থেকে সুদে ঋণ নেই। পরে ২০১৭ সালে বসত বাড়ি বিক্রি করে ওই টাকা সুদে আসলে ৪লাখ টাকা মেম্বারকে পরিশোধ করি। পরে মেম্বার সুদের আরো টাকা দাবি করলেও আমি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। মেম্বারকে টাকা দেয়ার কিছু দিন পর তিনি আমাকে বলেন ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে বয়স্ক ভাতার তালিকা হচ্ছে আমি ও আমার স্ত্রীর আইডি কার্ড দিতে হবে। আমরা মেম্বারকে আমাদের আইডি কার্ড দিলে পরে তিনি ভাতার আবেদনের কথা বলে ২টি সাদা কাগজে আমাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়। এর কয়েক দিন পর আমার ওমান প্রবাসী ছেলে মহিন উদ্দিন পলাশ দেশে আসলে একই কায়দায় কাকৈরতলা বাজারে একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় মেম্বার বাচ্চু। সম্প্রতি মেম্বার বাচ্চু মিয়া আমাদের কাছে ৪২লাখ টাকা দাবি করে আসছে। আমার ছেলে তার কাছ থেকে আমাদের পরিবারটিকে মুক্ত করতে ঋণ করে আরো ৬লাখ টাকা দিতে রাজি হয়েছে কিন্তু সে কোন ভাবেই মানছে না। এ ব্যাপারে আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করি। সর্বশেষ রবিবার রিকশা চালক আব্দুল খালেকের উপর কাকৈরতলা বাজারে হামলা চালায় মেম্বার বাচ্চু মিয়া। এসময় মেম্বারের হাত থেকে নিজের স্বামীর জীবন বাঁচাতে ৯৯৯ নাম্বারে কল করে বৃদ্ধা মুর্শিদা বেগম।
অপর ভূক্তভোগী কাকৈরতলা গ্রামের খন্দকার আবুল হোসেন বলেন, আমি মেম্বার বাচ্চু মিয়ার সুদের কারবারের বিষয়ে প্রতিবাদ করায় সে একটি ভুয়া ডকুমেন্ট তৈরি করে আমাকে বাজারে বেঁধে রাখে। পরে আমার পরিবারের লোকজন থানা পুলিশের সহযোগীতায় আমাকে উদ্ধার করে। এনিয়ে শালিস বৈঠক বসলে আমি নির্দোষ প্রমানিত হই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বাচ্চু মিয়া বলেন, তারা আমার কাছ থেকে প্রতি বছর শতকরা ৫০টাকা সুদে ২০১৬ সালে ৬লাখ টাকা নেয়। এ টাকা সুদে আসল ও চক্রবৃদ্ধি মিলিয়ে আমি তাদের কাছে ১৯লাখের বেশী টাকা পাওনা আছি। এখন তারা আমার টাকা না দিয়ে বিভিন্ন রকম টালবাহানা করে আসছে। তাদের স্বাক্ষরিত সাদা কাগজ ও স্ট্যাম্প লিখা আছে। আজকে আমি তার কাছে টাকা চাইলে সে আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। আপনি সুদে টাকা দিয়ে অনেকের বাড়ি ও জমি দখল করেছেন বলে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সাংবাদিকরা মেম্বারকে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন আমি সবার কাছ থেকে জমি কিনে নিয়েছি।
পেরিয়া ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান বড় স্বাঙ্গিশ্বর গ্রামের হুমায়ুন কবির মজুমদারের কাছে বড় স্বাঙ্গিশ্বর গ্রামের আবুল কালাম মজুমদারের গরু নিয়ে যাওয়া ও একই গ্রামের মোজ্জামেল হোসেনের জমি লিখে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন বিষয় গুলো সঠিক, তবে কয়েক বছর পূর্বে।
এব্যাপারে পেরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ হামিদ বলেন, বাচ্চু মেম্বার সুদের কাজ করে এটা সঠিক। আমার কাছে দরিদ্র রিকশা চালক আব্দুল খালেক বাচ্চু মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।
নাঙ্গলকোট থানা অফিসার ইনচার্জ দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, মারামারির বিষয়টি শুনেছি, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক-শফিকুর রহমান চৌধুরী (এম এ)
বার্তা সম্পাদক- মাঈন উদ্দিন দুলাল
সহ-সম্পাদক- মোহাম্মদ আল আমিন
অফিস : জোড্ডা বাজার,নাঙ্গলকোট,কুমিল্লা।
প্রধান সম্পাদক-০১৬০১৯২০৭১৩
নির্বাহী সম্পাদক-০১৯১১২৫৭৪৯৬
বার্তা সম্পাদক-০১৭১৬০২১১৪৫
ইমেল-nangalkottimes24@gmail.com