প্রকাশিত: ৯:৩২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার :
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার নোয়াখালী সীমান্তে অবস্থিত দৌলখাঁড় ইউনিয়নের পাইকোট গ্রাম, গ্রামটিতে সাড়ে ৩ হাজার মানুষের বসবাস। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে ওই গ্রামের চিহিৃত চোর সর্দার বেলাল ও শাহআলম বিভিন্ন এলাকায় চুরি করে বেড়াতেন। তবে পাইকোট গ্রামের চিহিৃত চোর হলেও তৎকালীন সময়ে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের কোঠর অবস্থানের কারণে ওই চোরদল নিজ গ্রামে করতে পারেনি চুরি-ডাকাতি। ২০১৮ সালে চুরির ঘটনায় বিভিন্ন মামলায় আসামী হয়ে ওই দুই চোর সর্দার ও তার ভাই খোরশেদ আলম তৎকালীন উপজেলা আ’লীগ সভাপতি রফিকুল হোসেন চেয়ারম্যানের স্থানীয় বটতলী বাজার অফিসে গিয়ে ফুল দিয়ে আ’লীগে যোগদেন। পরে গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তারা পুনরায় বিএনপি পরিচয়ে বেপরোয়া ভাবে নিজ এলাকাতেই শুরু করে জুয়া, চুরি ও মাদক কারবার। গত রমাজান মাসে টানা ১৮দিনে পাইকোট গ্রামে ১৮টি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। এনিয়ে ২২ রমজান পাইকোট পীর মোহাম্মদ বাজার জামে মসজিদে তারাবির নামাজ শেষে গ্রামের শতাধিক মানুষ চোরদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদেরকে রুখতে কুরআন শপথ করেন।
সর্বশেষ বুধবার রাত ২টার দিকে ওই গ্রামের মরহুম আসলাম মিয়ার ছেলে আব্দুল মালেকের ঘরের ষ্টীলের জানালা কেটে ১টি মোবাইল ফোন ও তার সৌদি আরব প্রবাসী ছেলে মোহাম্মদ রাজিবের স্ত্রী আরিফা সুলতানার গলা থেকে ১ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায়। চেইন নিয়ে যাওয়ার সময় আরিফার শোর চিৎকারে শ্বশুর ও শ্বাশুড়ি এগিয়ে এসে দরজা খোলার চেষ্টা করলে চোর দল তাদেরকে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করলে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় আব্দুল মালেক বাদি হয়ে বুধবার দুপুরে নাঙ্গলকোট থানায় অজ্ঞাত নামা একাধিক চোরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। একই দিন বিকেলে নাঙ্গলকোট থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক শুভ রুদ্র সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ভূক্তভোগী আব্দুল মালেক বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে আমার বসত বিল্ডিং এর শোয়ার খাটের পাশের গ্রীল কেটে এবং জানালার ষ্টীলেরপাত কেটে খাটের উপর থেকে একটি মোবাইল সেট ও আমার পুত্রবধূর গলায় থাকা এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায়। এসময় আমি ও আমার স্ত্রী দরজা খুলার চেষ্টা করলে অজ্ঞাত নামা এক চোর আমাদেরকে হত্যা ও আরো ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে চলে যায়। এছাড়াও বিগত কয়েক মাস যাবৎ আমাদের গ্রামে প্রতিদিনই চুরির ঘটনা ঘটে আসছে। গ্রামটি কুমিল্লা জেলার সর্ব শেষ গ্রাম হওয়ায় ও থানা থেকে প্রায় ২০কিলোমিটার দূরে হওয়ায় প্রশাসন এ বিষয়ে তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। আমরা সরকার ও প্রশাসনের কাছে আমাদের গ্রামের নিরাপত্তার দাবি জানাই।
স্থানীয় জামায়াত নেতা ও স্কুল শিক্ষক শুহাদ আলম বলেন, আমাদের গ্রামটি উপজেলা সদর থেকে দূরে ও জেলার শেষ গ্রাম হওয়ায় এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার ফলে আ’লীগ সরকারের পতনের পর থেকে চুরির ঘটনা আমাদের গ্রামটিতে মহামারি আকার ধারণ করেছে, প্রতিদিনই গ্রামের কোন না কোন ঘরে চোর প্রবেশ করে তাদেরকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে। এনিয়ে রমজানের শেষ দিকে গ্রামের শতাধিক মানুষ চোর দমনে কুরআন শপথ করেও চোরদের দৌরত্ব থামাতে পারেনি।
স্থানীয় যুবদল নেতা ওয়ালিদ খন্দকার বলেন, আমাদের গ্রামের সড়কটি প্রতিদিন রাতেই মাদক পাচারের নিরাপদ সড়ক হিসেবে ব্যবহার হয় এবং প্রতিদিন রাতেই এ সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে বসে জুয়ার আসর। গত সাপ্তাহেও নাঙ্গলকোট থানা পুলিশ পাইকোট গ্রামের আহসান ও কামালকে জুয়ার বোর্ড থেকে ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু ২দিন পর তারা পুনরায় আদালত থেকে জামিন নিয়ে চলে এসে আবার সক্রিয় হয়। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির টিউবয়েলর মাথা ও বৈদ্যুতিক মোটর চোরদের কারনে রাখা যায় না। সরকার পতনের পর থেকে তারা বেশি বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। আমরা এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও দৌলখাঁড় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মাসুদ পারভেজ বলেন, পাইকোট গ্রামে গত কয়েক বছরে কোন চুরির ঘটনাই ঘটেনি। সরকার পতনের পর থেকে এ গ্রামের একাধিক চুরির মামলার আসামী চিহিৃত চোর সর্দার বেলাল ও শাহ আলমের নেতৃত্বে চোরদল বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। রমজান মাসের কয়েক দিন আগ থেকে শুরু করে ১৮দিনে ১৮টি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটার পর গ্রামের সকল দলের মানুষ এক হয়ে পীর মোহাম্মদ বাজার মসজিদে কুরআন শপথ করেও তাদের রুখতে পারছি না। প্রশাসন আমাদেরকে সহযোগীতা করলে আমরা গ্রামবাসী মিলে চুরি, জুয়া ও মাদক নিমূল করতে পারবো। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগীতা কামনা করছি। চোর সর্দার বেলাল ও শাহ আলম কার ছত্রছায়ায় এসব অপকর্ম করে আসছে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মাসুদ বলেন তারা আ’লীগ শাসনামলে আ’লীগে যোগ দিলেও সরকার পতনের পর তারা নিজ দল বিএনপিতে ফিরে গেছে।
অভিযুক্ত বেলাল ও শাহআলমকে না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
নাঙ্গলকোট থানা ইন্সপেক্টর তদন্ত জাহাঙ্গীর আলম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্ত চলমান আছে।
প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক-শফিকুর রহমান চৌধুরী (এম এ)
বার্তা সম্পাদক- মাঈন উদ্দিন দুলাল
সহ-সম্পাদক- মোহাম্মদ আল আমিন
প্রধান সম্পাদক-০১৬০১৯২০৭১৩
নির্বাহী সম্পাদক-০১৯১১২৫৭৪৯৬
বার্তা সম্পাদক-০১৭১৬০২১১৪৫
ইমেল-nangalkottimes24@gmail.com
জোড্ডা বাজার,নাঙ্গলকোট,কুমিল্লা।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৪-২০২৪।
ফেইসবুক- facebook.com/nangalkottimes24
Design and developed by AshrafTech