মাঈন উদ্দিন দুলাল- নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট দক্ষিণ ইউনিয়নের নারানদিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে আব্দুল্লাহ আল সৈকত (২৫) কে পার্শ্ববর্তী চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের ঝাটিয়ারখিল ফুলগাঁও গ্রামের সিরাজ মিঞার ফসলি জমির পাশে হত্যা করে একটি গাব গাছে লাশ গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৭ মে শনিবার দুপুরে। পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে নাঙ্গলকোট উপজেলার নারানদিয়া গ্রামের লাশ দাফন করে। এ ব্যাপারে সৈকতের ভগ্নিপতি ঝাটিয়াখিল গ্রামের কাজী মশিউর রহমান চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয় ও পরিবারের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নাঙ্গলকোট উপজেলার নারানদিয়া গ্রামের দুবাই প্রবাসী আব্দুল্লাহ আল সৈকত একই উপজেলার নগরীপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের মেয়ে লিমা আক্তার এর সাথে দীর্ঘ এক বছর যাবৎ দুবাই থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সে গত ফেব্রæয়ারী মাসে দুবাই থেকে দেশে এসে প্রথমে লিমার বাড়িতে ৭/৮ দিন অবস্থান করেছিল বলে জানান ছেলের পরিবার। প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে লিমা, সৈকত থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে সৈকতের পরিবার বিয়ের প্রস্তাব দিলে মেয়ের পক্ষ ১০ লক্ষ টাকার মোহরানা দাবি করে। সৈকত ৩ লক্ষ টাকায় রাজি হয়। কিন্তু তা মেয়ে পক্ষ প্রত্যাক্ষান করলে ছেলের পরিবার কিছুদিন পর একই ইউনিয়নের পশ্চিম বামপাড়া গ্রামের আব্দুল খালেকের মেয়ে খালেদা আক্তার সোনিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করে। সৈকতের বিয়ের খবর জেনে প্রেমিকা লিমা ছেলের মোবাইলে বিভিন্ন সময় বার বার ফোন করে বিরক্ত করতে থাকে। এভাবে একদিন মোবাইলে ফোন করলে ছেলের অনুপস্থিতিতে তার নববধূ খালেদা আক্তার সোনিয়া ফোন রিসিভ করলে প্রেমিকা লিমা তাকে হুমকিস্বরূপ বলে, তোদের সংসার কিভাবে টিকে থাকে আমি দেখে নেব?
গত ৩ মে ঈদুল ফিতরের দিন বিকেলে সোনিয়া তার স্বামীকে নিয়ে তার বাপের বাড়ি পশ্চিম বামপাড়া বেড়াতে যায়। ৬ মে শুক্রবার সকাল ১১ টায় সোনিয়ার ভাই ইমাম হোসেনকে নিয়ে সৈকত নারানদিয়া নিজ বাড়িতে যায়। সৈকত নিজ বাড়িতে অবস্থানকালে প্রেমিকা লিমা তাকে মোবাইলে বারবার কল দিতে থাকে। তখন সে তার মাকে বাজার করে দিয়ে রাত ৮ টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমে লিমাকে নিয়ে চিলপাড়া কাবাব হাউজ এবং পরে চৌদ্দগ্রামের ধৌড়করা বাজারে যায়।
সৈকতের মা আনোয়ারা বেগম রাত ৯টায় ফোন দিলে সে বলে মা আমি আসিতেছি। পরে রাত ১১ টায় ফোন দিলে বলে মা দেরি হবে। এর ২০ মিনিট পর তার শ্বশুর আব্দুল খালেক ফোন দিয়ে তার মাকে জানান, সৈকত এক মেয়েকে নিয়ে চৌদ্দগ্রাম ধৌড়করা গ্রামে আটক আছে। তার মা জেনে তার শ্বশুর আব্দুল খালেক, কালেম গ্রামের তার ভগ্নিপতি নবীকে নিয়ে সিএনজি যোগে ধৌড়করা গ্রামে যায়। সেখানে পৌঁছে তারা দেখতে পায়, লিমাকে ঘিরে বেশ কয়েকজন বখাটে ছেলে অবস্থান করছে এবং কিছু দূরে সৈকতকে তারা আটক করে রেখেছে। সৈকতের পরিবার জানান সৈকতকে লিমার লোকজন আটক করে লিমাকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব করলে সৈকত বলে আমি বিয়ে করেছি। সে বিয়ে প্রত্যাক্ষান করে এবং তার মোবাইল ফোন আটক করে বলে জানান তার ভগ্নিপতি কাজী মশিউর রহমান। পরে তার অভিভাবকগণ উপস্থিত হলে কিছুক্ষণ পরে সৈকত বাঁচার জন্য সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে তার মা, ভগ্নিপতি এবং তার শশুর লিমার লোকজনের হাতে আটকা পড়ে। তখন লিমার লোকজন তাদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। জানা যায়, একপর্যায়ে স্থানীয় মেম্বারের মধ্যস্থতায় তারা টাকা ও বনসই দিয়ে ওখান থেকে চলে আসে। সৈকতের অভিভাবকেরা প্রেমিকা লিমাকে রাত ৪ টায় নগরীপাড়া গ্রামের পৌঁছে দেয় এবং তারা স্ব-স্ব বাড়িতে চলে যায়।
নিহতের ভগ্নিপতি কাজী মশিউর রহমান বলেন, সৈকতকে ধোড়করা গ্রামের লোকজন আটক করে মারপিট করে এবং তার মোবাইল ফোন রেখে দেয়। আমি তার হত্যার বিচার দাবী করছি।
সৈকতের মা আনোয়ারা বেগম আরো জানান, সৈকত পালিয়ে তার ভগ্নিপতি চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ঝাটিয়াখিল গ্রামে অবস্থান করে পরদিন ৭ মে শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে তার বোনের বাড়ি বাগানে ঘুরাঘুরি করতে থাকে এমতাবস্থায় কে বা কারা সৈকতকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ ঝাটিয়ারখিল ফুলগাঁও গ্রামের সিরাজ মিঞার ফসলি জমির পাশে গাব গাছে ঝুলিয়ে রাখে। চৌদ্দগ্রাম থানার কনকাপৈত পুলিশ ফাঁড়ি উপ-পরিদর্শক হুমায়ুন কবির লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে সৈকতের গ্রামের বাড়ি নারানদিয়া দাফন করে।
প্রেমিকা লিমা সাংবাদিকদের জানান, সৈকত আমার ব্যক্তিগত কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছে এবং আমাকে হুমকি দিচ্ছে বারবার। আমাকে সৈকত ফোন করে ধৌড়করা গ্রামে নিয়ে যায়, সেখানে আমাদের দু’জনকে অপরিচিত দেখে স্থানীয় লোকজন আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারপর সৈকতের পরিবার খবর পেয়ে আমাদেরকে উদ্ধার করে। আমি তার হত্যার বিষয়ে কিছুই জানিনা।
এ ব্যাপারে ছেলের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ছেলের প্রেমিকা লিমা ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে আমার ছেলেকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে বলে মনে করি। সরকার ও প্রশাসনের কাছে আমি তদন্ত সাপেক্ষে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করি। সৈকতের নববধূ সোনিয়া জানান, আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।
এই বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার কনকাপৈত পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক হুমায়ুন কবির বলেন, আমি লাশের সুরতহাল করে লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করি। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক-শফিকুর রহমান চৌধুরী (এম এ)
বার্তা সম্পাদক- মাঈন উদ্দিন দুলাল
সহ-সম্পাদক- মোহাম্মদ আল আমিন
অফিস : জোড্ডা বাজার,নাঙ্গলকোট,কুমিল্লা।
প্রধান সম্পাদক-০১৬০১৯২০৭১৩
নির্বাহী সম্পাদক-০১৯১১২৫৭৪৯৬
বার্তা সম্পাদক-০১৭১৬০২১১৪৫
ইমেল-nangalkottimes24@gmail.com