মাঈন উদ্দিন দুলাল, নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা)॥
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের গণমানুষের নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক দু’বারের সফল সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার আজ ১৬ তম মৃত্যু বার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মিলাদ মাহফিল, কোরআন খতম ও কাঙ্গালীভোজের আয়োজন করা হয়েছে। ১৯৪৮ সালে নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পিতার নাম মরহুম আনু মিয়া ভূঁইয়া, মাতার নাম মরহুমা উম্মে কুলসুম। তারা পাঁচ ভাই, চার বোন। ভাইদের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। তিনি ময়ুরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ফেনী সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক (ডিগ্রী) পাশ করেন। তিনি কলেজে অধ্যয়নকালীন ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন শেষে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। দাম্পত্য জীবনে তিনি একমাত্র কন্যা সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর নাম মোহছেনা আবেদীন ফেন্সী। একমাত্র আদরের মেয়ের নাম রওশন আরা আবেদীন সিগ্ধা।
১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী কাজী জহিরুল কাইয়ুমকে বিজয়ী করতে তিনি হোমনাবাদে গড়ে তুলেন বিশাল জনমত। জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে অসিম সাহসিকতার নিয়ে হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করতে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু গণ-রায়ের জন্য সংসদ নির্বাচন দিলে ওই নির্বাচনে ফের মনোনয়ন লাভ করেন কাজী জহিরুল কাইয়ুম। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের অনেক বাঘা বাঘা নেতা দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করলেও জয়নাল আবেদীন ভুঁইয়ার বুদ্ধিমত্ত্বায় শেষ পর্যন্ত নৌকার বিজয় নিশ্চিত হয়। জয়নাল আবেদীন ভুঁইয়া ১৯৭৭ সালে ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হন। ১৯৭৯ সালে আওয়ামীলীগের দূর্যোগপূর্ণ মুহুর্তে মনোনয়ন লাভ করেন ‘‘হোমনাবাদের কীর্তি পুরুষ’’ খ্যাত জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া। তখন বয়সে তিনি তরুণ। নৌকার কান্ডারী তিনি।
জীবনের প্রথম সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী, ইউ.পি.পি চেয়ারম্যান পরবর্তীতে এরশাদ মন্ত্রীসভার প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে এম.পি নির্বাচিত হন জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া। ওই নির্বাচনে সারাদেশে আওয়ামীলীগের মাত্র ৩৯ জন এম.পি’র মধ্যে জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া ছিলেন অন্যতম একজন। প্রথমবার এম.পি নির্বাচিত হয়ে তিনি চৌদ্দগ্রামের হোমনাবাদ অঞ্চল এবং লাকসাম উপজেলার অবহেলিত পাঁচটি ইউনিয়নের সমন্বয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা (থানা) গঠনের প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করেন। এরই প্রেক্ষিতে একনেকে পাশ করানোর মাধ্যমে নাঙ্গলকোট উপজেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯৮৬ এবং ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু নীলনকশার নির্বাচনে কারচুপির কারণে তিনি সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে বিশাল ভোটের ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রয়াত জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া জীবদ্দশায় জনকল্যাণে নিবেদিত ছিলেন। নাঙ্গলকোটের উন্নয়নে তিনি প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া নাঙ্গলকোটবাসীকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিয়ে চলে যান। তাঁর তিনটি জানাজায় লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশগ্রহণ করে। যা আজো চির স্মরণীয়। নিজ বাড়ি বদরপুরে বাড়ির পার্শ্বে পুকুর ধারে সবুজ বৃক্ষে ঘেরা শ্যামল মাটিতে অন্তিম শয়ানে শায়িত করা হয় জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়াকে।
প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক-শফিকুর রহমান চৌধুরী (এম এ)
বার্তা সম্পাদক- মাঈন উদ্দিন দুলাল
সহ-সম্পাদক- মোহাম্মদ আল আমিন
অফিস : জোড্ডা বাজার,নাঙ্গলকোট,কুমিল্লা।
প্রধান সম্পাদক-০১৬০১৯২০৭১৩
নির্বাহী সম্পাদক-০১৯১১২৫৭৪৯৬
বার্তা সম্পাদক-০১৭১৬০২১১৪৫
ইমেল-nangalkottimes24@gmail.com