সাহিত্যে ‘সায়েম মাহবুব’ সকল কালেই প্রাসঙ্গিক। আজিম উল্যাহ হানিফ:

প্রকাশিত: ৫:২৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০২৩

সাহিত্যে ‘সায়েম মাহবুব’ সকল কালেই প্রাসঙ্গিক। আজিম উল্যাহ হানিফ:

সাহিত্যে ‘সায়েম মাহবুব’ সকল কালেই প্রাসঙ্গিক
আজিম উল্যাহ হানিফ:
সাহিত্যের অনেকগুলো শাখায় বিচরণ করা ব্যক্তির নাম সায়েম মাহবুব। তিনি সাটিফিকেট বয়স অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারী ১৯৭২ কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার ধাতীশ^র গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করা সায়েম মাহবুব এরশাদের আমলেই লেখালেখিতে জড়িয়ে পড়েন। প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে প্রায় ৬টি। অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থগুলো বেশ পাঠক সমাদৃত হয়েছে। তিনি ২০২৩ সালের ২১ মে ঢাকার একটি হাসপাতালে ৫২ বছর বয়সে শেষ নি:শ^াস ত্যাগ করেন। কয়েকদিন আগে ‘কেউ’ একজন বলল সেদিন সায়েম মাহবুব তো মারা গেছে। কি হবে তাহলে? সায়েম মাহবুব কি শেষ। আমি বললাম সায়েম মাহবুব সকল কালেই তিনি প্রাসঙ্গিক থাকবেন। তিনি চুপ করে গেলেন। তার কথার ভাবার্থ নিয়েই আজকের আলোচনাটি। আসলেই ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয়। বরং সায়েম মাহবুব জীবিত থাকাকালীন শেষ ৩০ বছর যেভাবে আলোচনায় ছিলেন। সামনের দিনগুলোতে আরো বেশি প্রবলবেগে প্রাসঙ্গিক থাকবেন। কেননা একজন সায়েম মাহবুবকে আপনি কোন সময়ে বা কালে সীমাবদ্ধ করে রাখতে পারবেন না তো। আপনি কোন সময়ের দিকে তাকাবেন, কোন দশকের দিকে চোখ বুলাবেন, সেদিকেই দেখবেন সায়েম মাহবুব প্রাসঙ্গিক।

আপনি মহান মুক্তিযুদ্ধের দিকে যাবেন। আলোচনা করুন,গবেষনা করুন। সায়েম মাহবুব কে আপনি গবেষক হিসেবে আবিষ্কৃত করবেন আপনি নিজেই। আপনি নিজ এলাকায় ওনাকে নিয়ে চিন্তা করবেন? তাহলে দেখুন ওনি নিজ এলাকায় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান করেছেন, সহযোগী ছিলেন, পরামর্শ দিয়ে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। আপনি স্থানীয় সাংবাদিক সংগঠনের দিকে যাবেন? সেখানে দেখবেন বড় বটগাছটাই তিনি ছিলেন। সেখানে তিনি সবার মধ্যে বড় চেয়ারটাই তিনি বসতেন। লিখতেন। পরামর্শ দিতেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবেন? সেখানে সেখানে দেখবেন শিক্ষানুরাগী মাহবুব কতটা প্রয়োজন, শিক্ষক ক্ষেত্রে। সমাজের দিকে তাকান, সেখানেও দেখবেন- সায়েম মাহবুব কতটা প্রয়োজন, কতটা প্রাসঙ্গিক। আপনি নিজেই বিশ^াস করতে পারছেন না কত বড় মাপের কবি বা লেখক ছিলেন তিনি। আপনি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার দিকে তাকান। যেখানে নজরুল-রবীন্দ্রনাথ ছাড়া কোন কথাই নেই। আমরা যদি সাহিত্য বিচারে দেখি- ১৮০০ শতাব্দীতে বিদ্যাসাগর, ডিএল রায়, বঙ্কিম চন্দ্র-শরৎ চন্দ্র, মধুসূদন দত্ত, প্রমথ চৌধুরী, কায়কোবাদ, রবী ঠাকুরের স্বর্ণালি যুগ বিবেচনায় রাখি, সেখানে দেখতে পাই ১ম বিশ^যুদ্ধের পর পরই কাজী নজরুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন, আতোয়ার হোসেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী, আবদুল কাদির, গোলাম মোস্তফা বিচরণ করছেন। ৩০ দশকে এসে পাই সুফিয়া কামাল, সুকান্ত, শামসুর রাহমান, ফররুখ আহমদ, আহসান হাবীব, আবুল হোসেন, সৈয়দ আলী আহসানদের।

৪০ দশকে এসে পাই সমুদ্রগুপ্ত, আল মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হক। ৫০ দশকে এসে পাই নির্মলেন্দু গুন, আসাদ চৌধুরী, আল মুজাহিদী, কবীর চৌধুরী, আবুল হাসান, মহাদেব সাহা, শামসুদ্দীন ইলিয়াস, মুহম্মদ নুরুল হুদা, ৬০ দশকে এসে পাই- হাসান হাফিজুর রহমান, মুনীর চৌধুরী, আহমদ রফিক, রফিক আজাদ, সাযযাদ কাদির, সৈয়দ মাজহারুল, বিচারপতি হাবিবুর রহমান খান, হাসান হাফিজ, শহীদ কাদরী, দিলওয়ার, শহীদুল্লাহ কায়সার। ৭০ দশকে এসে পাই রেজাউদ্দিন স্টালিন, হাসান হাফিজুর রহমান, আবদুল হাই শিকদার, এস এম আবুল বাশার, আবুল খায়ের মোসলেহ উদ্দিন, আবদুল জলিল, আলী হোসেন চেীধুরী, জহিরুল হক দুলাল, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, শাহীন রেজা,আবদুল হালিম খাঁ, তিতাস চৌধুরী, হাসান আলীম, রাজু আলীম, মতিউর রহমান মল্লিকদের। ৮০ দশকে এসে পাই জীবনানন্দ দাশ (তিনি ১ম বিশ^যুদ্ধের পর পরই হলেও আলোচনায় আসেন আশির দশকে), অধ্যাপক আবদুল ওহাব, ইমদাদুল হক মিলন, নঈম নিজাম, কামাল চৌধুরী, ড. স্বপ্না রায়, বেলাল চৌধুরী, হেলাল হাফিজ, ফখরুল হুদা হেলাল, রাশেদ রউফ, দীপ্র আজাদ কাজল, তছলিম হোসেন হাওলাদার, এহতেশাম হায়দার চৌধুরী,রাশেদ রউফ, মাহমুদুল হাসান নিজামী, কাসেম বিন আবু বকর, মোশারফ হোসেন খান। ৯০ দশকে-এবিএম সোহেল রশিদ, মিনার মাহমুদ, আপেল মাহমুদ,আইউব সৈয়দ, শরীফ আহমেদ অলি, সায়েম মাহবুব, ডক্টর মেহেদী হাসান, ডক্টর আছাদুজ্জামান, মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন, ফারুক শাহরিয়া, ফারুক আল শারাহ, সাইফুল আনোয়ার স্বপন, আবদুল আউয়াল সরকার, শেরআলী শেরবাগ, লতিফ জোর্য়াদার, জাকির আবু জাফর। একুশ শতাব্দীর শুরুতে মাসুদা তোফা, রহিমা আক্তার মৌ, রোকসানা সুখী, মাইদুল ইসলাম মুক্তা, সৈয়দ রনো, আবিদ আজম, ইমরান মাহফুজ, আরিফুল হাসান, রানা হাসান, রফিকুজ্জামান রণি, নাহিন ফেরদৌস, নুরুন্নাহার মুন্নি, শাহীন বানু, জামাল উদ্দিন দামাল, নজরুল ইসলাম দুলাল, রমিজ খান, অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান, অধ্যক্ষ ইয়াছিন মজুমদার, মোরশেদ আলম হৃদয়, মুকুল মজুমদার, এইচ এম আজিজুল হক, আ শ ম বাবর আলী, ফজলুল মল্লিক,আফজাল হোসেন মিয়াজী, জালাল খান ইউসুফী, তাসলিমা শাহনুর, আশিক বিন রহিম,খাজিনা খাজি, জয়দেব ভট্টাচার্য্য ভুলু, আবদুল হাই ইদ্রিছী প্রমুখ।

মোটকথা হলো- সেখানে অন্য কবি-লেখকদের মত তিনিও সাহিত্যের একটি উচু জায়গায় নিজেকে অবস্থান করতে পেরেছেন। জীবদ্দশায় হয়তো দেখে যেতে পারেন নি। দেশের সকল স্তরের লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের সাথে ছিল নিবিড় যোগাযোগ ও সম্পর্ক। লিখতেন সকল পত্রিকায়। আড্ডা দিতেন কবি-সাহিত্যিকদের সাথে। সায়েম মাহবুব সম্পর্কে কয়েকজন লেখক মন্তব্য করেছেন এভাবে- সায়েম মাহবুবের প্রকাশিত গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত লেখার মধ্য দিয়ে হাজার বছর বেঁচে থাকবেন তিনি। তাইতো একজন কবি যখন লেখেন- ‘মন চায়নি আপনাকে দিতে বিদায়/ কিন্তু বিধাতার নিয়ম যে-তাই আমরা নিরুপায়/সময় চলে গেলো সময়ের মত/ মনে করে দেখুন সায়েম মাহবুবের সাথে স্মৃতি আছে কত।’
সায়েম মাহবুবের চিন্তা ও ভাবনা ছিল বড় মাপের। তিনি নির্দিষ্ট কোন গোত্র বা এলাকা নিয়ে যেমন চিন্তা করেন নি,তেমনি লেখেন নি। তিনি চিন্তা করেছেন,ভেবেছেন দেশ জাতিকে নিয়ে। পুরো দেশকে নিয়ে। যা বুঝা যায় তার লেখাগুলো পড়লেও গবেষনা করলে। ‘সাংবাদিক সায়েম মাহবুব স্মৃতি সংসদ’ ও ‘সায়েম মাহবুব পরিষদ’ সেভাবেই আগাচ্ছে। (উল্লেখ্য-অনেক সাহিত্যিক-লেখকের নাম উল্লেখ করতে পারি নি। পরবর্তী কোন লেখায় সংশোধন করে নিবো।)
লেখক: আজিম উল্যাহ হানিফ-সদস্য সচিব-‘সাংবাদিক সায়েম মাহবুব স্মৃতি সংসদ’।

 

Please follow and like us:

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা

সর্বশেষ সংবাদ