বাংগড্ডা ৩ ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে॥ প্রতিবাদে ৫ শিক্ষকের পদত্যাগ

প্রকাশিত: ১:২৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২১

বাংগড্ডা ৩ ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে॥ প্রতিবাদে ৫ শিক্ষকের পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিনিধি- নাঙ্গলকোট উপজেলার বাংগড্ডা দারুল ফালাহ হামিদীয়া মহিলা মাদরাসার ৩ শিশু শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে ওই মাদরাসার প্রধান শিক্ষক শাহ্ মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন হামিদীর বিরুদ্ধে। যৌন হয়রানির শিকার ৩ ছাত্রী ওই মাদরাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। এ ব্যাপারে অভিভাবকরা গত বুধবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। ছাত্রীদের যৌন হয়রানির প্রতিবাদে ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ শিক্ষক পদ ত্যাগ করেছেন।
স্থানীয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাঙ্গড্ডা দারুল ফালাহ হামিদীয়া মহিলা মাদরাসার মালিক ও প্রধান শিক্ষক রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের চারিজানিয়া গ্রামের মৃত সামছু উদ্দিন হামিদীর ছেলে নিজাম উদ্দিন হামিদী দীর্ঘদিন যাবৎ তার প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করে আসছে। তাকে অনেক অভিভাবক সর্তক করার পরও অপকর্ম থেকে ফিরেনি সে। তার যৌন লালসার কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং আত্মসম্মানের ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি। সম্প্রতি ওই প্রতিষ্ঠানের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর বাংঙ্গড্ডা ইউনিয়নের দু’ ছাত্রী ও পাশ্ববর্তী রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের এক ছাত্রীকে আবাসিক কক্ষ এবং প্রধান শিক্ষক নিজামের কক্ষে নিয়ে যৌন হয়রানি করে। যৌন হয়রানির শিকার ছাত্রীদের মাধ্যমে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন হামিদী একই ভাবে আরো কয়েক শিশুকে যৌন হয়রানি করেন। তথ্যের ভিত্তিতে ওই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এছাড়াও ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আবাসিকে দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষিকার সাথে রাত্রি যাপনের অভিযোগ রয়েছে।
বাঙ্গড্ডা দারুল ফালাহ হামিদীয়া মহিলা মাদরাসার ফেস্টুন, ব্যানারে মহিলা শিক্ষক ধারা পরিচালিত কথাটি লিখা থাকলেও মূলত ৮ শিক্ষকের মধ্যে মহিলা শিক্ষক মাত্র ২জন। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম শ্রেণী থেকে ৬ষ্ট শ্রেণী পর্যন্ত কিন্তু প্রধান শিক্ষক মাদরাসার সাইনবোর্ডে নিজের পদবী লিখেছে অধ্যক্ষ শাহ্ মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন হামিদী। তাছাড়া এমন একটি প্রতিষ্ঠান আছে এ বিষয়ে জানেন না উপজেলা শিক্ষা অফিস অথবা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা। এখন প্রশ্ন উঠেছে ওই মাদ্রাসার প্রায় ২ শ’ শিক্ষার্থীর সরকারী পাঠ্যপুস্তক গুলোর যোগান আসে কোথা থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিজাম উদ্দিন হামিদী তার দাদা মুফতি মোস্তফা হামিদীর প্রতিষ্ঠিত চারিজানিয়া জামেয়াই ছালেহিয়া দ্বীনিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থীদের তালিকায় শত-শত ভুয়া নাম দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে উপজেলা থেকে পাঠ্যপুস্তুক সংগ্রহণ করে বাঙ্গড্ডা দারুল ফালাহ হামিদীয়া মহিলা মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিলি করেন।
এ বিষয়ে যৌন হয়রানির শিকার ৩ শিক্ষার্থী মাদরাসার কয়েক জন শিক্ষকের কাছে বিষয়টি জানালে ওই শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন হামিদীর নিকট বিষয়টির সত্যতা জানতে চাইলে নিজাম ক্ষেপে গিয়ে তাদের হুমকি প্রদান করে ও এ বিষয়ে কোন কথা না বলার নির্দেশ দেন। শিক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে শুনে ওই শিক্ষকদের হত্যা ও মামলার হুমকি দেয় প্রধান শিক্ষক নিজাম ও তার বড় ভাই একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নেছার উদ্দিন হামিদী। প্রধান শিক্ষকের হুমকিতে জীবনের ভয়ে ও ছাত্রীদের যৌন হয়রানির প্রতিবাদে গত রবিবার সবুজ আহম্মেদ, মেহেদী হাছান, আরিফ বিল্লাহ ফিরোজ নামে ৩ শিক্ষক এবং এর পূর্বে মোহাম্মদ হামিম ও পারভেজ হোসেন নামে ২ শিক্ষক পদত্যাগ করেন। পরে গত সোমবার যৌন হয়রানির শিকার এক ছাত্রীকে মাদরাসায় বন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠে প্রধান শিক্ষক নিজামের বিরুদ্ধে। এনিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে ওই ছাত্রীকে নিয়ে প্রধান শিক্ষক তাদের বাড়ীতে গিয়ে ছাত্রীদের পিতা-মাতার পায়ে ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
যৌন হয়রানির শিকার ৬ষ্ট শ্রেণীর ৩ শিক্ষার্থী বলেন, নিজাম হুজুর আমাদেরকে প্রায় সময় জড়িয়ে ধরে। আমরা আবাসিক কক্ষে ঘুমিয়ে থাকলে আমাদের রুমে গিয়ে আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেয়। আমাদেরকে মাঝে মধ্যে হুজুরের রুমে নিয়ে কোলে বসিয়ে রাখে ও বিভিন্ন স্থানে আদর করে। এ বিষয় গুলো বাড়ীতে না বলতে আমাদের ভয়ভীতি দেখায়। আমরা হুজুরের ডাকে উনার রুমে না গেলে তিনি বলেন শিক্ষকের কথা না শুনলে জাহান্নামে যেতে হবে।
মাদরাসা থেকে পদত্যাগ করা ৫ শিক্ষক সাংবাদিকদের কাছে ভিডিও বক্তব্যে বলেন, প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন হামিদী ৩ ছাত্রী ছাড়াও আরো কয়েক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেছে। মাদ্রাসার আবাসিক এক শিক্ষিকার সাথে সে এক রুমে রাত্রী যাপন করতো। পরে বিষয়টি মাদরাসার আবাসিক শিক্ষার্র্থীদের মাধ্যমে জানাজানি হলে ওই শিক্ষিকা মাদরাসা থেকে চলে যায়। এ ছাড়াও প্রধান শিক্ষকের বড় ভাই ওই মাদরাসার সহকারী শিক্ষক নেছার উদ্দিন হামিদীর বিরুদ্ধে মাদক সেবনের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ওই শিক্ষকরা। মাদক সেবন করে শিক্ষার্থীদের অমানবিক ভাবে নির্যাতনেরও অভিযোগ রায়েছে তার বিরুদ্ধে।
প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন হামিদী বলেন, আমি এ ছাত্রীদেরকে আগে আদর করলেও এখন করিনা। আমার প্রতিষ্ঠান চারিজানিয়া জামেয়াই ছালেহিয়া দ্বীনিয়া দাখিল মাদরাসার শাখা। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে আমি বই সংগ্রহ করি। মাদরাসার আবাসিকে থাকার বিষয়ে ওই প্রধান শিক্ষক বলেন আমি সম্প্রতি বিয়ে করেছি, বিয়ের আগে আবাসিকে থাকতাম।
বাংগড্ডা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহজাহান মজুমদার বলেন, আমি ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও শিক্ষিকার সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়ে শুনেছি। তবে আমার নিকট কেউ অভিযোগ করেনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাছির উদ্দিন বলেন, প্রতিষ্ঠানটি আমাদের তালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠান নয়। তাছাড়া তারা কোথায় থেকে বই সংগ্রহ করে এ বিষয়েও আমি অবগত নই।
নাঙ্গলকোট থানা তদন্ত কর্মকর্তা রকিবুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেনে থানার একজন অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছি। ওই অফিসার তদন্ত করে কি পেয়েছে তার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার লামইয়া সাইফুল বলেন, আমি তাদেরকে ডাকাচ্ছি, তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনবো। আমি ওসি সাহেবকে বিষয়টি বলেছি। বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখবো।

Please follow and like us:

ফেইসবুকে আমরা

সর্বশেষ সংবাদ