নাঙ্গলকোটে যমজ দু’ভাই ও দুই বোনের সাফল্য

প্রকাশিত: ৪:০২ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০২৪

নাঙ্গলকোটে যমজ দু’ভাই ও দুই বোনের সাফল্য

মাঈন উদ্দিন দুলাল-

এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার ফলাফলে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে জানাইদুল ইসলাম মজুমদার ও জোবায়েরুল ইসলাম মজুমদার নামে যমজ দুই ভাই এবং ফাহিমা আক্তার ভূঁইয়া ও ফারজানা আক্তার ভূঁইয়া নামে যমজ দুই বোন জিপিএ-৫ অর্জন করেছে।
জোনাইদুল ইসলাম মজুমদার ও জোবায়েরুল ইসলাম মজুমদার মাত্র ৫ মিনিটের বড়-ছোট। যমজ দুই ভাইয়ের চেহারাও প্রায় একই রকম। তারা এবার কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার বাঙ্গড্ডা এডুকেয়ার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। গত রোববার প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, যমজ দুই ভাই জিপিএ-৫ পেয়েছে। জোনাইদ ও জোবায়ের নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের চারিজানিয়া গ্রামের পেয়ার আহম্মেদ ও রৌশনারা বেগম দম্পতির ছেলে। পেয়ার আহম্মেদ চট্টগ্রামের কে এন্ড টি লজিষ্টিক লিমিটেডে কর্মরত ছিলেন কিন্তু গত ৬ মাস যাবৎ শারীরিক অসুস্থতায় একে বারেই ঘর বন্দি। রৌশনারা বেগম একজন গৃহিনী। এই দম্পতির তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে জাহিদুল ইসলাম মজুমদার চট্টগ্রামের বাইতুশ শরফ মাদরাসায় অনার্স ২য় বর্ষে অধ্যায়নরত এবং মেয়ে বিবি ফাতেমা মজুমদার পাশ্ববর্তী মাহিনী লতিফিয়া এনামিয়া মহিলা মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী।
এছাড়া, ফাহিমা আক্তার ভূঁইয়া ও ফারজানা আক্তার ভূঁইয়া মাত্র কয়েক মিনিটের বড়-ছোট। যমজ দুই বোনের চেহারাও প্রায় একই রকম। তারা এবার কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঝিকুটিয়া ইসহাক মজুমদার আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে যমজ দুই বোন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে ফাহিমা সকল বিষয়ে এ প্লাস লাভ করেন। ফাহিমা ও ফারজানা নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট দক্ষিণ ইউনিয়নের বেল্টা গ্রামের মৃত মাওলানা ফরিদুল ইসলাম ভূঁইয়ার কন্যা। ৩ বছর বয়সে তারা তাদের পিতাকে হারান। তাদের পিতা মরহুম মাওলানা ফরিদুল ইসলাম ভূঁইয়া ছিলেন পাশ্ববর্তী চৌদ্দগ্রাম উপজেলার একতা বাজার ঈদগাহ শফিকিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তাদের মা ফরিদা বেগম একজন গৃহিনী। ফরিদ-ফরিদা দম্পতির তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তান। বড় মেয়ে ফাতেমা ভূঁইয়া রাজধানীর তেজগাঁও কলেজে ইকোনোমিক্স ৪র্থ বর্ষের ও ছেলে ফাহাদ ভূঁইয়া ফেনী সরকারি কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী।
জোনাইদ-জোবায়ের ও ফাহিমা-ফারজানা একই চেহারার এবং উচ্চতাও একই রকম হওয়ায় যমজ দু’ভাই ও দু’বোনকে চিনতে এলাকাবাসী ও স্কুলশিক্ষকদের মাঝে মধ্যে সমস্যায় পড়তে হয়।
জোনাইদ ও জোবায়ের বলেন, শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, আমাদের পিতা-মাতার দোয়া ও আল্লাহর রহমত থাকায় আমরা এ ফলাফল অর্জন করতে পেরিছে। আমরা শিক্ষকদের কাছে চির ঋণী। আমাদের পিতা একটি বেসরকারি কোম্পানীতে স্বল্প বেতনে চাকুরী করেন। গত ৬মাস পূর্বে বাবা অসুস্থ হন, আমাদের পরীক্ষার কয়েকদিন পূর্বে উনার শরীরে একটি বড় অপারেশনের প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু আমাদের পরীক্ষার খরচ ও অপারেশন দু’টি একই সময়ে হয়ে যাওয়ায় আমাদের পরীক্ষার খরচের কথা চিন্তা করে তিনি অপারেশন করতে রাজি হননি। পরে আমাদের আত্মীয় স্বজনদের অনুরোধ ও সহযোগীতায় বাবার অপারেশন হয়। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন, আমরা যেন মানুষের মতো মানুষ হয়ে পিতা মাতার দুঃখ ঘোচাতে পারি।
ফাহিমা ও ফারজানা বলেন, প্রথমে আমরা ভাল ফলাফলের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। তাছাড়া আমাদের শিক্ষকদের আন্তরিকতা, মায়ের শাসন ও স্বজনদের সহযোগীতায় আমরা ভাল ফলাফল অর্জন করেছি।

Please follow and like us:

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা

সর্বশেষ সংবাদ